তার নামটা আমি এখনও মুখে আনতে পারি, হয়ত একই রকমভাবে কিংবা নয়। আমি আশ্চর্য হই, কিভাবে তার নামটা আমার মুখে এখন এতটা সহজেই উঠে আসে যখন এটা মোটেও স্বাভাবিক কিংবা সরল ছিল না। কিন্তু তবুও সকল উপেক্ষার আড়ালে, অন্তরালে এটা সহজেই উঠে আসে আর আমি স্পষ্ট খেয়াল করতে পারি, ভিতরের এই যন্ত্রনাটা যেমনই হোক না কেন, তার নামটা মুখে উচ্চারিত হতেই আমার সমস্ত মুখে এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা কাজ করে। 'রুদ্র'। হ্যাঁ, সেটা রুদ্রই ছিল। আমি এখনও স্মরণে আনতে পারি সে ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন (আমার কাছে, যদিও তাকে অন্যরা ভেবে নিতে পারে উগ্র বাউন্ডুলে কিংবা পাগলাটে কেউ) তবে সেটা যেমনই হোক না কেন, আমার কাছে মূল্যহীন। কেননা আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম, তার পাগলামীকে ভালবেসেছিলাম, তার উস্কোখুস্কো এলোমেলো চুলগুলো ভালোবেসেছিলাম। সে ছিল আমার ভিতরে-বাহিরে, হৃদয়ে-প্রতিটি রক্তবিন্দুতে, আমার চোখের পলকে, দৃষ্টিতে-দৃষ্টির প্রতিটি আড়ালে, আমার ভাবনায়-চেতনায়... সে ছিল আমার সমস্তটা জুড়ে। আমি কোথায় ছিলাম আমার জানা নেই কিন্তু যেখানেই ছিলাম সে ছিল পরম ভালোবাসায় আর নিবিড় বন্ধুত্বের মায়ায়।
তার নামটা আমি এখনও মুখে আনতে পারি, হয়ত একই রকমভাবে কিংবা নয়। আমি আশ্চর্য হই, কিভাবে তার নামটা আমার মুখে এখন এতটা সহজেই উঠে আসে যখন এটা মোটেও স্বাভাবিক কিংবা সরল ছিল না। কিন্তু তবুও সকল উপেক্ষার আড়ালে, অন্তরালে এটা সহজেই উঠে আসে আর আমি স্পষ্ট খেয়াল করতে পারি, ভিতরের এই যন্ত্রনাটা যেমনই হোক না কেন, তার নামটা মুখে উচ্চারিত হতেই আমার সমস্ত মুখে এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা কাজ করে। 'রুদ্র'। হ্যাঁ, সেটা রুদ্রই ছিল। আমি এখনও স্মরণে আনতে পারি সে ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন (আমার কাছে, যদিও তাকে অন্যরা ভেবে নিতে পারে উগ্র বাউন্ডুলে কিংবা পাগলাটে কেউ) তবে সেটা যেমনই হোক না কেন, আমার কাছে মূল্যহীন। কেননা আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম, তার পাগলামীকে ভালবেসেছিলাম, তার উস্কোখুস্কো এলোমেলো চুলগুলো ভালোবেসেছিলাম। সে ছিল আমার ভিতরে-বাহিরে, হৃদয়ে-প্রতিটি রক্তবিন্দুতে, আমার চোখের পলকে, দৃষ্টিতে-দৃষ্টির প্রতিটি আড়ালে, আমার ভাবনায়-চেতনায়... সে ছিল আমার সমস্তটা জুড়ে। আমি কোথায় ছিলাম আমার জানা নেই কিন্তু যেখানেই ছিলাম সে ছিল পরম ভালোবাসায় আর নিবিড় বন্ধুত্বের মায়ায়।
আর আমার চোখ দু'টো তাকে প্রথম দেখতে পেয়েছিল এবং মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল সাথে সাথেই। হ্যাঁ, আমি একটা মুহূর্তেই স্মরনে নিয়ে আসতে পারি তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি। ক্যাম্পাস, কলেজের মধুর ক্যাম্পাস! তাকে যখন আমি প্রথম দেখেছিলাম, গিটার হাতে এলোচুলের এক পাগলাটে সুদর্শন যুবক। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর তার আড়ালে লুকায়িত লালচে চোখগুলো যেন প্রমাণ স্বরুপ বলে যাচ্ছিল তার অনেকগুলো নির্ঘুম রাত্রিযাপনের কথা। আর চিকনা-চাকনা ছেলেটা যখন হেঁটে যাচ্ছিল, এমন মনে হল যেন এখনই উড়ে যাবে হাওয়ার সাথে! আর তার খুব দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যেন খুব তাড়া ছিল। যদিও সেটা ছিল একটা ক্ষণিকের মুহূর্ত আমার তাকে দেখতে পাওয়ার কিন্তু আমি নিশ্চিত অনুভবে সেটা মোটেও কিছু সময়ের ব্যাপার ছিল না এবং যে ক'টা সময় আমার চোখের পলক পর্যন্ত পরেনি। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম, কলেজের এত ছেলের চাওয়া উপেক্ষা করে আমার দৃষ্টি কিনা আটকে গেল এই রুদ্রের উপর! প্রথম দেখায় প্রেম কাকে বলে আমার বোঝা হয়ে উঠেনি কখনই কিন্তু যতটা আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম চোখের আড়াল হয়ে গেলেও ছেলেটি তখনও ছিল আমার সমস্ত দৃষ্টি জুড়ে। সেটা তো কেবল শুরুই ছিল, কেননা আমি খেয়াল করতে পারছিলাম, ধীরে ধীরে আমার মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে দিয়েছিল। আমি তো আমার নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না। যে আমি কোন ছেলের প্রতি কখনই আগ্রহ প্রকাশ করিনি সেই আমিই কিনা ঐ পাগলাটে ছেলেটির তথ্য জানার জন্যে উদগ্রীব হয়ে গেলাম। যেই আমি নিজ থেকে কখনই কোন ছেলের সাথে যেচে কথা বলিনি সেই আমিই কিনা এক বান্ধবীর সাহায্যে ওর সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে বন্ধুত্বের আহবানে! কি হয়ে যাচ্ছিল আমার মাঝে, রুদ্রর উপেক্ষা প্রত্যাখান করে আমি যেভাবে লেগে ছিলাম ওর পিছে, কোথায় ছিল আমার তীব্র সেই আত্মসম্মানবোধ! আমি অবাক! আর যখন আমার আগ্রহের কাছে হার মেনে ও হাতটা বাড়িয়ে দেয় বন্ধুত্বের... আহা! সেই সময়টা এখনও আমাকে লাজুক করে দেয়! আমি তো রুদ্রের হাত ধরেছি, হেঁটেছি বহু পথ। এটা তো কেবল রুদ্রই ছিল যে শিখিয়েছে আমাকে কি করে দিগন্তের শেষেও পথ খুঁজে নিতে হয়। রুদ্রই তো শিখিয়েছে আমাকে নতুনভাবে বাঁচতে শেখা। তার কাছে জীবন-বেঁচে থাকার এক পৃথক আর অন্যরকম সংগা ছিল। তাকে আমি হাসতে দেখেছি পৃথিবীর সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক মুহূর্তটিতেও। আমি তাকে দেখেছি মানুষ, অনুভূতি, আবেক সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে। এবং খুব সম্ভবত সেটা একমাত্র আমিই ছিলাম যে এতটা কাছ থেকে তাকে জানার সুযোগ পেয়েছিল যেমনটা রুদ্র আমাকে প্রায়ই বলত। আমিই তো ছিলাম ওর সকল কর্মকান্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তবুও যেন আমি তাকে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করছিলাম নতুনভাবে, তার বিষয়ে আমি যতটা জেনেছি ততটাই যেন অজানা রয়ে যাচ্ছিল। আর আমি মিশে গিয়েছিলাম, নির্ভর হয়ে গিয়েছিলাম রুদ্রের প্রতি এতটাই, একটা মুহূর্ত অতবাহিত করাটাও যেন অসম্ভব হয়ে গেল ওকে ছাড়া। আর রুদ্র! সে ছিল অসম্ভব ভালো একজন বন্ধু, নিঃসন্দেহে কিন্তু আমি আমার বিষয়ে নিজের কাছে বিশস্ত ছিলাম না কখনই। আমি অনুভব করতে পারছিলাম রুদ্রর প্রতি আমার অমোঘ আকর্ষন, আমি বুঝতে পারছিলাম রুদ্রের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা। আমি ভীত ছিলাম, যদি সেটা প্রকাশিত হয়ে যায়! কেননা বন্ধুত্ব জড়িত ভালোবাসায় প্রত্যাখান মানে শুধুই হৃদয়ের ভাঙণটাকেই বোঝায় না বরং এর সাথে তাকেও হারানো হয় যার পাশে থাকাটা তখন খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠে, একজন বন্ধুর! তাই সবদিক বিবেচনায় আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম আমার অনুভূতিটাকে অনেকটা সময়, তখনও আমি নিশ্চুপ ছিলাম রুদ্রর সাথে অতিবাহিত করা সেই বৃষ্টিস্নাত বিকেলেও। আর আমি তখনও নির্বাক শুনেছি রুদ্রর মোহনীয় কন্ঠস্বর, ও আমাকে গান গেয়ে শুনিয়েছিল আর আমি হাঁ করে শুনে গেছি যেন গান নামক শব্দটার সাথে আমার আগে কখনই পরিচয় ঘটেনি নাকি আমি শুনে যাচ্ছিলাম কেবল রুদ্রকেই!